Saturday, December 25, 2010

শীত ঠেকাতে নকশাদার টুপি

শীত ঠেকাতে নকশাদার টুপি

হাসান শান্তনু
প্রচণ্ড শীত, কনকনে ঠাণ্ডা বাতাস। গোটা দেশ কাঁপছে শৈত্যপ্রবাহে। তীব্র শীতের দাপটে ঘরের ভেতরে থাকাও যেন দায়। জানালার ফাঁক গলে আসা বাতাসে একটুতেই ঝিম ধরে যায় পুরো শরীরে। তবু জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে ঘর থেকে বেরুতে হচ্ছে প্রায় সব পেশার মানুষকে। ঘরেই শীত থেকে রেহাই মিলছে না, বাইরের অবস্থা আরও ভয়াবহ। কখনও বাতাস বইছে একটানা, আবার কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো কুয়াশা। তখন কয়েক হাত দূরের জিনিস ভালো করে দেখা যায় না। অনেকে শীতের তীব্রতা থেকে নিজেকে বাঁচাতে শরীরে জড়িয়ে নিচ্ছেন গরম কাপড়। মাথা-কানকে শীত থেকে রক্ষা করতে পরছেন নানা রকম টুপি। টুপিতে কেউ কেউ নিজের মাথা, কান, গলা এমনভাবে ঢেকে বাইরে বেরুচ্ছেন যে তার চোখদুটিই কেবল দেখা যায়। বাহারি রং, নানা নকশা ও নামের টুপি হয়ে উঠছে শীত ঠেকানোর হাতিয়ার। এসব টুপি আকৃতি ও ধরনে বিচিত্র।
ঢাকার প্রায় সব এলাকাতে এখন মিলছে শীত ঠেকানোর টুপি। পাড়ার ফুটপাতের দোকান থেকে শুরু করে অভিজাত বিপণিবিতানেও বিক্রি হচ্ছে এসব। বিভিন্ন এলাকা ও কয়েকটি বিপণিবিতান ঘুরে জানা যায়, প্রায় সাত থেকে নয় ধরনের টুপি বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে আছে মাংকি টুপি, কান টুপি, বাঁদর টুপি, ইয়ার ফোন টুপি, ভুতুম টুপি, বেল্ট টুপি, পাঞ্জাবি টুপি, গ্লাভস টুপি ইত্যাদি। টুপির এমন নামকরণের সুনির্দিষ্ট কারণ জানা যায় না। এমনকি অনেক টুপির উত্পাদনকারী কোম্পানিও নাম নির্ধারণ করছে না। ধরন, আকৃতি ও কাজের সঙ্গে মিলিয়ে বিক্রেতা ও ক্রেতারাই অনেকক্ষেত্রে নাম নির্ধারণ করছেন। আর ওই নামেই পরিচিতি পাচ্ছে। যেমন, কান ঢেকে রাখে বলে ‘কান টুপি’, পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের লোকদের ব্যবহার করা টুপির আদলে তৈরি বলে ‘পাঞ্জাবি টুপি’, আবার ওপরে বোঁটা থাকে বলে ‘ভুতুম টুপি’।
শীতের তীব্রতা থেকে কান-মাথাকে বাঁচাতে একসময়কার মাফলারের জায়গা এখন দখলে নিচ্ছে এসব টুপি। আর ফ্যাশনসচেতন তরুণদের মধ্যে শীতকালে জনপ্রিয়ও হয়ে উঠছে। তবে অনেকেই টুপির সঙ্গে মাফলার জড়াতেও ভুলছেন না। প্রায় সব বয়সের মানুষই এসব টুপি ব্যবহার করছেন। বিশেষ করে শিশুদের মাথা-কান মায়েরা মুড়িয়ে রাখছেন টুপিতে। ধানমন্ডির বাসিন্দা ও গৃহিণী শাহানা শিউলি তার ছয় বছরের মেয়ের শরীর অন্য গরম কাপড়ের সঙ্গে টুপিতে মুড়িয়ে কেনাকাটা করতে গতকাল দুপুরে বাইরে বের হন। তিনি জানান, ‘কেবল বাইরে বেরুনোর সময়ই নয়, বাসায় থাকলেও আজকাল মেয়েকে টুপি পরিয়ে রাখি।’ বেসরকারি একটি ব্যাংকে কর্মরত আফজাল আহমদ গতকাল এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আজ নগরীর আকাশে দুপুরের দিকে সূর্য দেখা গেলেও সকালে কুয়াশায় ঢাকা ছিল। তাছাড়া সূর্যে বিশ্বাস নেই। শৈত্যপ্রবাহ কাটবে না, আবহাওয়া অফিসের এমন সতর্ক বার্তাও আছে। শীত থেকে রক্ষা পেতে টুপি জড়িয়ে বাসা থেকে বেরিয়েছি।’ তার মতে, ‘মুসলমানদের নামাজ আদায়ের টুপি অন্য ধর্মাবলম্বীদেরও কেউ কেউ ব্যবহার করেন। শীত ঠেকাতে এখন সব ধর্মের মানুষ টুপি পরছেন।’ তবে নগরীর নানা এলাকায় ঘুরলে তরুণদের মধ্যেই টুপির ব্যবহারটা বেশি চোখে পড়ে। অনেকক্ষেত্রে একই ধরন, আকৃতির টুপি নারী-পুরুষ উভয়েই ব্যবহার করছেন। নারী-পুরুষের জন্য আলাদা নকশা, রং, কারুকাজের টুপিও পাওয়া যাচ্ছে। বয়স অনুযায়ী টুপিও হচ্ছে ভিন্ন রকম।
চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাড়ছে দাম। কারওয়ানবাজারের ফুটপাতের বিক্রেতা আবদুল আউয়াল আমার দেশকে জানান, ‘বাঁদর টুপি এবার শীতের শুরুতেও ৩০ টাকা করে বিক্রি হতো। গত কয়েক দিন ধরে শৈত্যপ্রবাহ চলতে থাকায় ওই টুপি এখন ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফার্মগেটের বাসস্ট্যান্ডের ফুটপাতের বিক্রেতা সাব্বির হোসেনও একই কথা জানান। তিনি বলেন, ইয়ার ফোন টুপি আগে ১০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন দাম বাড়তি। প্রতি টুপির দাম রাখা হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। এছাড়া মানকি টুপি একশ’ থেকে দুইশ’ টাকা, কান টুপি ৫০ থেকে ৮০ টাকা ও বেল্ট টুপির দাম দেড়শ’ থেকে দুইশ’ টাকা।
নানা জাতের টুপির মধ্যে বাজারে সবচেয়ে কম দামে বিক্রি হচ্ছে ইয়ার ফোন টুপি। মাথার পেছন থেকে দুই কানকে চেপে ধরে রাখে এ টুপি। অনেকে একে রিং টুপিও বলছেন। দাম কম হওয়ায় শ্রমজীবী ও স্বল্প আয়ের মানুষের কাছে এ টুপি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। দেশে উত্পাদিত টুপির মধ্যে সবচেয়ে দামি গ্লাভস টুপি। এর দাম পড়ছে প্রায় তিনশ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ টাকা। কোনো কোনো বিক্রেতা আবার সুযোগ বুঝে দাম রাখছেন চারশ’ টাকার বেশি। পুরো কপালসহ মাথা থেকে গলা পর্যন্ত ঢেকে রাখে এ টুপি। সাধারণত মোটরসাইকেলের চালকরা হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডা বাতাস থেকে নিজেদের রক্ষা করতে এ টুপি বেশি ব্যবহার করেন। এছাড়া ফ্যাশনসচেতন অনেক তরুণই এ টুপি ব্যবহার করছেন।
এসব টুপির বেশিরভাগই দেশের গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিতে উত্পাদিত হচ্ছে। দেশে উত্পাদিত নানা জাতের টুপি পাওয়া যাচ্ছে রাজধানীর নিউমার্কেট, পুরনো ঢাকার বঙ্গ মার্কেট, ফার্মগেটের একাাধিক মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকায় কাপড় বিক্রির ছোট-বড় দোকান ও ফুটপাতে। দেশি টুপির ফাশাপাশি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে নানা দেশের টুপি। বিদেশি টুপির নকশা, কারুকাজ যেমন আকর্ষণীয়, তেমনি দামটাও বেশি। নগরীর পান্থপথের বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, ধানমন্ডির রাফা প্লাজা, উত্তরার মাসকট প্লাজা ও কুশল সেন্টারের মতো অভিজাত মার্কেটে বিদেশি ব্র্যান্ডের টুপি বেশি বিক্রি হচ্ছে। এসব টুপি এডিডাস, রিবক, নাইকি, রকসহ পৃথিবীখ্যাত কোম্পানির উত্পাদিত। এদেশে টুপিগুলোর ক্রেতা উচ্চ ও মধ্যবিত্তরা বলে জানা যায়। একাধিক দোকানি জানান, প্রতি টুপির দাম পড়ে কমপক্ষে পাঁচশ’ টাকা। তবে হাজার টাকা দামের টুপিও আছে। দেশে উত্পাদিত অনেক টুপির গায়েও বিদেশি কোম্পানির নাম লেখা থাকছে। ক্রেতাদের আকর্ষণ বাড়াতে উত্পাদকরা এটা করছেন।

No comments:

Post a Comment