Tuesday, October 12, 2010

শীতের প্রস্তুতি

শীতের প্রস্তুতি

-আঞ্জুমান আরা
ঋতুর আবর্তনে শীত কড়া নাড়ছে। কিছুদিনের মধ্যেই উত্তরের হিমেল হাওয়া বইতে শুরু করবে। প্রকৃতির পরিবর্তনে মানুষের লাইফস্টাইলে পরিবর্তনটাও স্বাভাবিক। সেজন্য থাকা চাই কিছু প্রস্তুতিও। তুলে রাখা লেপ, কম্বল আর ভারি শীতের কাপড়গুলো নামানোর প্রয়োজন হয়ে পড়বে। এরই প্রস্তুতি বিষয়ে জানিয়েছেন আঞ্জুমান আরা বেগম—লেপ, কম্বল, কাঁথা প্রভৃতি নামানোর পর ব্যবহারের আগে অবশ্যই কড়া রোদে শুকাতে হবে। লেপ ব্যবহারের সময় অবশ্যই লেপের কভার লাগিয়ে নিতে হবে। কম্বল ব্যবহারের ক্ষেত্রে অনেক সময় কভার ব্যবহার করা হয় না। অনেক দিন ব্যবহার না করার কারণে এতে ছত্রাক পড়ে। এ থেকে অ্যালার্জি হতে পারে। তাই রোদে ভালো করে শুকিয়ে নিতে হবে।
কম্বল দীর্ঘদিন ব্যবহার না করার কারণে অনেক সময় তা পোকায় কেটে ফেলে। ফলে যে অংশ পোকায় কাটে তা রিপু করে ব্যবহারের উপযোগী করতে হবে। শীতের পোশাক যেমন সোয়েটার, চাদর, শাল ধুয়ে ভালো করে রোদে শুকিয়ে তবেই ব্যবহার করতে হবে। ছোটদের শীতের পোশাক, শীতটুপি, উল কিংবা ফ্লানেলের জামাও পরিষ্কার করে রোদে শুকিয়ে ব্যবহার করতে হবে। ছেলেদের কোট ও ব্লেজার ব্যবহারের আগে ব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করে রোদে শুকাতে হবে।
উলের কাপড় ধোয়ার জন্য কম ক্ষারযুক্ত সাবান, জেট পাউডার ও শ্যাম্পু বিশেষ উপযোগী। পশমি কাপড়ে রং ওঠার সম্ভাবনা থাকলে তা রিঠার পানিতে ধোয়া নিরাপদ। উলের কাপড় ধোয়ার পর পানি নিংড়ানোর জন্য কখনোই মোড়ানো ঠিক নয়। এতে কাপড়ের ক্ষতি হয়। ধোয়ার পর বড় আকৃতির তোয়ালের মধ্যে কাপড়টি জড়িয়ে দুই হাত দিয়ে চেপে পানি নিংড়াতে হবে। উল বা পশমি কাপড় বেশিক্ষণ পানিতে ভিজিয়ে রাখলে তা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই আনুমানিক এক ঘণ্টার বেশি সময় কাপড় পানিতে ভিজিয়ে না রাখাই ভালো। উল বা পশমি কাপড় কখনোই কড়া রোদে শুকাতে দেবেন না। উলের কাপড় ধোয়ার সময় কখনোই কাপড় ব্রাশ দিয়ে ঘষবেন না। ডিটারজেন্ট পানিতে কাপড় ভিজিয়ে কিছুক্ষণ পর দুই হাত দিয়ে কাপড় কেচে নিন। এতে কাপড়ের ভেতর জমে থাকা ময়লা দূর হয়ে যাবে। হাতমোজা ও মাফলার ধোয়ার সময়ও একই পদ্ধতি অবলম্বন করুন। পশমি কাপড় ধোয়ার সময় পানিতে সাদা কাপড়ের বেলায় লেবুর রস এবং রঙিন কাপড়ের বেলায় ভিনেগার মিশিয়ে নিন। এতে কাপড়ের ঔজ্জ্বল্য ঠিক থাকবে। শীতের সময় ঘরের মেঝে যেহেতু ঠাণ্ডা থাকে, তাই শীত আসার আগেই শতরঞ্জি কিংবা সামর্থ্য থাকলে ফ্লোরম্যাট কিনে রাখা ভালো। পর্যাপ্ত শীতের পোশাক না থাকলে এখনই বেরিয়ে পড়ুন পোশাক কিনতে। শীতের পোশাক আলমারিতে রাখার সময় অবশ্যই নির্দিষ্ট স্থানে গুছিয়ে রাখতে হবে। অবশ্যই সব সময় আলমারির ভেতর ন্যাপথলিন দিয়ে রাখতে হবে। শীতের পোশাক ভাঁজ করে সারিবদ্ধ কিংবা হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখতে হবে, যাতে প্রয়োজনের সময় হাতের নাগালেই পাওয়া যায়। যেসব ঘরে কাচের জানালা আছে, শীতের সময় তাতে অবশ্যই ভারী পর্দা ব্যবহার করতে হবে। যদি জানালার কোনো শার্সি কিংবা কাচ ভেঙে বা নষ্ট হয়ে যায়, তবে দ্রুত সারিয়ে নিতে হবে। বাড়ির উত্তর দিকের জানালা কম খুললে ঠাণ্ডা বাতাস ঘরের ভেতর তেমন ঢুকতে পারে না। শীতের উষ্ণতা পেতে হলে ঘরে পর্যাপ্ত রোদ আসার ব্যবস্থা করতে হবে।
শীতে ত্বকের যত্ন
আমাদের ত্বকের ধরন মূলত জন্মগতভাবেই নির্ধারিত হয়। ত্বকের এই ধরন কোনোভাবেই পরিবর্তন করা যাবে না। তাই আপনার ত্বকের ধরন যাই হোক না কেন, প্রতিদিন নিয়ম করে ত্বক পরিষ্কার করুন। এরপর গরম পানিতে মুখ ধুয়ে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটা দিন। নরম তোয়ালে দিয়ে চেপে চেপে মুছে নিয়ে ত্বকের ধরন অনুযায়ী টোনিং করে এরপর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। আপনার ময়েশ্চারাইজারে যদি সান প্রটেকটিভ ফ্যাক্টর না থাকে, তবে আপনাকে অবশ্যই আলাদাভাবে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। আপনার বয়স যদি পঁচিশ হয়ে থাকে, প্রতি মাসে নিয়ম করে ফেসিয়াল করুন।

টিপস
—এমনিতে সব ঋতুতেই গোসলের সময়ে আমাদের ত্বক ময়েশ্চার হারায়। শীতের সময়ে এ প্রবণতা আরও বৃদ্ধি পায়। তাই এ থেকে বাঁচতে এ ঋতুতে গোসলের আগে অলিভ অয়েল বা নারকেল তেল দিয়ে ম্যাসাজ করে নিতে পারেন অথবা গোসলের পানিতে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল দিয়ে নিন।
—আপনার ত্বকের ধরন যাই হোক না কেন, আপনার ত্বককে দিন হাইড্রোথেরাপি। এই থেরাপি অনুযায়ী প্রথমে গরম পানিতে গোসল করে এরপর ১০-১৫ সেকেন্ড ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করতে হয়। এরপর আবারও গরম পানিতে। এভাবে ঝাড়া ২ মিনিট গায়ে পানি ঢেলে তিন মিনিটে গোসল শেষ করুন। এভাবে গোসল করলে সঠিকভাবে রক্ত সঞ্চালন হয়। তবে গরম পানিতে গোসল করলেও মাথা অবশ্যই ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধোয়া উচিত।
—দুই টেবিল চামচ ডালের গুঁড়া এবং দই দিয়ে একটা পেস্ট তৈরি করে নিতে হবে । দইয়ের মাঝে ব্লিচিংয়ের কিছু উপাদান থাকে যা গায়ের রংকে উজ্জ্বল করে ।
—মধু এবং লেবুর মিশ্রণ তৈরি করে ত্বকে লাগালে রোদে পোড়া ভাব দূর হবে । এটি তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপকারী।
—কমলা এবং লেবুর শুকনা খোসার গুঁড়ার সঙ্গে অল্প পরিমাণে গোলাপজল এবং দুধের সর মিশিয়ে ত্বকে লাগান, শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। এটি গায়ের রং ফর্সা করবে এবং ত্বককে মসৃণ করবে।
—শুষ্ক ত্বকের জন্য দুধের সর অত্যন্ত কার্যকরী। যে কোনো প্যাকের সঙ্গে অল্প পরিমাণ মেশালে ত্বকের শুষ্ক ভাব দূর হয়।
—ময়দা এবং দুধের সর মিলিয়ে পেস্ট তৈরি করুন এবং ত্বকে লাগান । ত্বককে মসৃণ করবে এবং ত্বকের শুষ্ক ভাব দূর করবে।
—তৈলাক্ত ত্বকের জন্য পাকা টমেটো ও মুলতানি মাটি দিয়ে প্যাক তৈরি করে ব্যবহার করুন। যতক্ষণ পর্যন্ত না শুকায়, হালকা হাতে ঘষতে থাকুন। এরপর উষ্ণ গরম পানিতে ধুয়ে তারপর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ঝাপটা দিন।
—সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সময়টাতে বাইরে বের হওয়ার সময় অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। সানগ্লাসটিও সঙ্গে রাখুন।
—সুন্দর, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, প্রাণবন্ত ত্বক পেতে ভেতর থেকেই এর পুষ্টি জোগাতে হবে। তাই আপনার খাদ্য তালিকায় রাখুন প্রচুর পরিমাণে তাজা খাবার, পর্যাপ্ত পরিমাণে হলুদ ও কমলা সবজি যাতে বিদ্যমান রয়েছে বিটা-ক্যারোটিন এবং সালফার সমৃদ্ধ খাবার যেমন—রসুন, পেঁয়াজ, অ্যাসপ্যারাগাস ও ডিম। আরও খাবেন তাজা ফল, বীজ, মটরশুঁটি জাতীয় সবজি ও বাদাম এবং অবশ্যই আপনার খাদ্য তালিকায় মধু সংযোজন করুন। মধুর প্রাকৃতিক প্রতিষেধক ত্বকের অভ্যন্তরীণ ক্ষত সারায়। এছাড়াও আখের রস, দুধ ও ঘি খাবেন।
—এ সময়ে ত্বক যেহেতু খুব দ্রুত এর আর্দ্রতা হারায়, তাই এই আর্দ্রতা ধরে রাখতে প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এক কাপ গরম দুধে চা-চামচের চার ভাগের এক ভাগ ঘি মিলিয়ে পান করুন।
—প্রতিদিন এক গ্লাস গরম পানিতে একটা লেবু চিপে পান করুন। এটি একটি চাইনিজ থেরাপি। এই লেবু-পানি শরীরের সেই আর্বজনাকে বের করে দেয়, যা ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া ও ফাটার জন্য দায়ী।
—বিষাদগ্রস্ততাকে ঝেড়ে ফেলুন, কেননা আপনি যতই রূপচর্চা করুন না কেন, এই বিষাদগ্রস্ততাই আপনার কোমল ত্বকে বলিরেখা হয়ে দেখা দেয়।
শীতের মেকআপ : এই ঋতুতে আপনার সাজ অন্য ঋতুর তুলনায় আরও বেশি আকর্ষণীয় এবং পরিমার্জিত হওয়া প্রয়োজন। শীত এমনই এক সময়, যখন দিনের বেলাতেও আপনি চাইলে উজ্জ্বল আইশ্যাডো নিতে পারেন আবার ঠোঁটে চকচকে গ্লসি লিপস্টিক দিতে পারেন। সাজ-সজ্জায় আবারও চলে আসবে চোখধাঁধানো ভেলভেট কাপড়ের মতো মসৃণ উজ্জ্বলতা। আমরা তো প্রতিদিনই কিছুটা হলেও সাজি। কিন্তু পার্টির জন্য সাজ মানে কিছুটা আলাদা তো বটেই। সাজটায় থাকবে এমন নমনীয়, সুন্দর, আর্কষণীয় ভিন্নতা, যেন আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা দেখায়।
আপনার গায়ের রং ফর্সা হলে ব্লাশারের রং হতে পারে তামাটে পিঙ্ক, লাইট ব্রাউন, পিচ এবং গোল্ডেন পিচ্ রঙের। লিপস্টিক নিন পেল পিঙ্ক, সুগার পিঙ্ক, কোরাল, রিচ রেড, পিচ্ ব্রাউন, ওয়ার্ম পিঙ্ক। আইশ্যাডো নিন ব্লু, এপ্রিকট, গ্রাস গ্রিন, সোনা রং, স্যান্ড ব্রাউন, গ্রে, সফ্ট ব্রাউন, কর্নফ্লাওয়ার ব্লু, ভায়োলেট এবং অন্যান্য পিঙ্কিশ শেড।
গায়ের রং শ্যামলা হলে ব্লাশার নিন পিচ্ এবং সোনা রঙের। লিপস্টিক নিন হানি, পিঙ্কিশ, গোল্ডেন, ব্রাউন, রাস্ট এবং টেরাকোটা রঙের। আইশ্যাডো নিন গোল্ডেন, পিঙ্কিশ, মিলিটারি গ্রিন, ডিপ পিঙ্ক, স্মোকি ব্ল্যাক এবং বেইজ ব্রাউন।
আপনার গায়ের রং যদি হয় কালো অর্থাত্ কৃষ্ণকলি—
আপনি ব্লাশার নিন কপার, রাস্ট, ডার্ক রোজ এবং ব্রোঞ্জ রঙের। লিপস্টিক নিন রেডিশ ব্রাউন, বার্গেন্ডি ও কোকোয়া। আইশ্যাডোর রং হতে পারে রাস্ট, পার্পল, গোল্ডেন, ব্রাউন, কপার স্মোকি ব্ল্যাক।
নিচে কিছু টিপ্স দেয়া হলো, যেগুলো মানলে আপনি থাকবেন যে কোনো পার্টির কেন্দ্রবিন্দু :
ষপার্টিতে যাওয়ার আগে বেশি সময় নিয়ে গোসল করুন এবং কিছুটা সময় রেস্ট নেয়ার চেষ্টা করুন, যাতে করে আপনাকে টায়ার্ড না দেখায়; বরং প্রাণবন্ত দেখায়।
ষসাজার সময় চোখ অথবা ঠোঁট যে কোনো একটিকে প্রাধান্য দিন। আপনি যদি চোখের মেকআপকে গাঢ় করেন, তবে ঠোঁটে হালকা রং ব্যবহার করলেও এই সাজ ইন্দ্রিয়কে কম নাড়া দেবে না।
ষদিনের বেলায় (সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত) মেকআপ করার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন।
ষশীতকালে স্মোকি আই খুব ভালো দেখায়। আবার আপনি চাইলে চারুচিনি বা কফি শেডের আইশ্যাডো ব্যবহার করেও আপনার মেকআপকে আকর্ষণীয় করে তুলতে পারেন।
ষযদিও কালো মাশকারা সবাই ব্যবহার করে, আপনি চাইলে অবারজিন এবং ডার্ক ব্রাউন রঙের মাশকারা ব্যবহার করে আপনার সাজে আনতে পারেন চমত্কার পরিবর্তন।
ষপার্টিতে আপনি কী পরবেন, পার্টির আগের রাতেই সবকিছু ঠিকঠাক করে রাখুন।
ষঅবশ্যই কোনো ভালো পারফিউম ব্যবহার করুন। পার্টিতে যাওয়ার আগে কাঁচা রসুন খাবেন না।
ষকোনো পার্টিতে খুব বেশি রকমের গহনা পরবেন না, এতে আপনি নিজেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।
ষপার্টিতে যাওয়ার আগে নেইল পলিশ ব্যবহার করলে, ফ্রেশ নেইল পলিশ ব্যবহার করুন।
ষএই ঋতুতে প্রতি রাতেই খুব ভালো করে ময়েশ্চারাইজার মেখে ঘুমাতে যাবেন। আবার দিনের বেলাতেও ত্বকের ধরন অনুযায়ী যে কোনো ভালো ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে।